ভাত নাকি রুটি? কোন টি ওজন কমাতে সাহায্য করে!
আসলে বাঙালি ধানের প্রাণ। আর এই বাঙালিদের ভাত ছাড়াই থাকতে হয়। ভাত খাওয়ার ফলে চর্বি বৃদ্ধি,
চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়। অনেক ধারণা আমাদের ভিতরে বাস করে। অনেকেই ভাত ছেড়ে দিয়ে রুটি খেতে লাগলেন। রুটি খেলে এ ধরনের সমস্যা সহজেই এড়ানো যায়।
ওজন কমাতে হলে, ডায়াবেটিস কমাতে হলে ভাতের বদলে রুটি খান। ডাক্তার ও পুষ্টিবিদেরা হরদম এ পরামর্শ দেন, সাধারণ মানুষও আজকাল তা ভালোই জানেন ও মানেন। আর সে জন্যই বিগত দশকগুলোতে বাঙালির পাতে ভাতের বদলে রুটির দেখা মিলছে একাধিক বেলায়। সকালবেলা গরম ভাত আলুভর্তা, ডাল দিয়ে মেখে খেয়ে অফিসে বা কৃষিকাজে যেতেন যে বাঙালি, দুপুরে টিফিন বা সানকি ভরে আবার ভাত যেত যাঁদের খাওয়ার জন্য, আবার সন্ধ্যায় ফিরে আবার সেই পেট পুরে ভাত খেয়ে ঘুমাতে যাওয়া সেই বাঙালির ঘরে নাকি আজকাল চালের পরিবর্তে আটা কেনার হার বেশি!
ভাতের প্রয়োজনীয় উপাদান
ভাতের কথা শুনলে অনেকে নাক ছিটকান। তবে আপনি হয়তো অবাক হবেন যে ভাত হল পুষ্টির ভান্ডার। এতে ফলিক অ্যাসিড,
ভিটামিন বি৩,
ফসফরাস,
জিঙ্ক,
ম্যাগনেসিয়াম,
সেলেনিয়াম,
পটাসিয়াম,
ফাইবার এবং কিছু চিনি রয়েছে। এই সমস্ত উপাদান শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভাত অন্তর্ভুক্ত করা নিরাপদ। এই বীজ থেকে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে। তাই বাংলায় ভাত খাওয়ার রেওয়াজ প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।
রুটির পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণের দিক থেকে রুটি দ্বিতীয় নয়। এটি ফাইবারের একটি বাস্তব ভাণ্ডার। তাই রুটি খেলে সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাউরুটিতে ফলিক অ্যাসিড,
ফসফরাস,
ম্যাগনেসিয়াম,
জিঙ্ক,
সেলেনিয়াম,
পটাসিয়াম এবং কিছু চিনিও থাকে। তাই রুটি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এবং সর্বোত্তম অংশ:
পুরো শস্যের রুটিতে পুরো শস্য রয়েছে। তাই এর পুষ্টিগুণ যথেষ্ট।
আটার রুটি না ভাত,
কোনটা বেশি উপকারী?
ভাত এবং রুটি উভয়ই পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই আপনি যা খুশি খেতে পারেন। আসলে অনেকেই মনে করেন ভাত খেলে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়। যাইহোক,
এই ধারণা ভিত্তিহীন। রুটি যেমন খাই তেমনি ভাতও খাই। আপনি শুধু মাপ জানতে হবে.
তেমনি ভাত খাওয়ার সাথে ওজন বৃদ্ধির সম্পর্ক নেই। তাই ভাত আর রুটির মধ্যে যা খুশি তাই খান।
গ্লূটেন অ্যালার্জি থাকলে রুটি খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো
আটায় গ্লূটেন নামক একটি উপাদান থাকে। কিন্তু সবাই এই উপাদান হজম করতে পারে না। আটা দিয়ে তৈরি রুটি খাওয়ার কারণে তারা পেটের সমস্যা, বদহজম, পেট ফাঁপা এবং হাইপার অ্যাসিডিটিতে ভোগেন। তাই এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রুটির পরিবর্তে ভাত খাওয়া উচিত। এই দুটি পণ্যের পুষ্টির মান প্রায় একই। সুতরাং, ভাত খাওয়ার সময় পুষ্টির ঘাটতির ঝুঁকি নেই। তবে সাদা ভাত না খাওয়াই ভালো। বরং সুস্থ থাকতে লাল চালের ভাত খান।
ওজন কমানোর জ্ন্য যা খাওয়া উচিত
বডি মাস ইনডেক্স
(উচ্চতা অনুসারে ওজন)
অপেক্ষাকৃত কম হলেও এশীয়দের শরীরের মধ্যভাগের এ চর্বিই হলো সব ক্ষতির মূল কারণ।
কথা ঠিক যে ভাত আর রুটি দুটোই শর্করা বা শর্করা। সব শর্করাই খাওয়ার পর পরিপাকতন্ত্রে গিয়ে ভাঙে,
তারপর রক্তে শোষিত হয় গ্লুকোজ বা মনোস্যাকারাইড হিসেবে। সেই গ্লুকোজ হলো আমাদের মূল চালিকা শক্তি। শরীরের প্রায় প্রতিটি শারীরবৃত্তীয় কাজে দরকার হয় এ গ্লুকোজ। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা শর্করা দেহে সঞ্চিত হয় চর্বি বা ফ্যাট হিসেবে। আমাদের মতো যারা শর্করা খাওয়া জাতি,
সেই এশীয়দের তাই শরীরের মধ্যভাগ বা ভুঁড়ি চর্বিতে ঠাসা,
লিভারে চর্বি,
পেটের অভ্যন্তরে প্রতিটি অঙ্গের গায়ে চর্বি
(ভিসেরাল ফ্যাট)।
বডি মাস ইনডেক্স
(উচ্চতা অনুসারে ওজন)
অপেক্ষাকৃত কম হলেও এশীয়দের শরীরের মধ্যভাগের এ চর্বিই হলো সব ক্ষতির মূল কারণ। বিজ্ঞানীরা এ ধরনের শরীরকে বলেন আপেল শেপড বডি,
মানে মধ্যভাগ স্ফীত। আরেক ধরনের শরীর হলো পিয়ার শেপড বডি,
মানে বাহু-কাঁধ-হাত-পা পেশিবহুল হলেও মধ্যভাগ সরু। আমরা হলাম আপেল। পৃথিবীর এ অঞ্চলে তাই দ্রুত বাড়ছে স্থূলতা,
ডায়াবেটিস,
হাইপারটেনশন,
হৃদ্রোগের ঝুঁকি। তাই শর্করা অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলেও খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে,
আর খেতে হবে বেছে। যে শর্করায় অপেক্ষাকৃত গ্লুকোজ কম উৎপন্ন হয়,
সেটাই আদর্শ।
৭০ জিআই বা তার বেশি হলে সেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বা হাই জিআই ফুড। সেসব খাবার যত কম খাওয়া যায়,
তত ভালো। ৫৫-৭০ হলো মধ্যম জিআই ফুড,
যা মোটামুটি খেতে পারেন। জিআই ৫৫–এর নিচে হলে পেট ভরে বারবার খেলেও বেশি ক্ষতি নেই। এখানেই হলো ভাত আর রুটির মূল পার্থক্য।
আটা বা ময়দা,
যেকোনো ধরনের রুটিতেই কার্বোহাইড্রেট থাকে। ২০ থেকে ২৫ গ্রাম আটায় তৈরি একটা রুটিতে থাকে প্রায় ৭০ ক্যালোরি। এবার কয়টা রুটি খাচ্ছেন সেটি হিসেব করে দেখুন কতটুকু ক্যালোরি গ্রহণ করছেন। একটি রুটিতে ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
দৈনিক পুষ্টির মাত্র ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থেকে নেওয়া উচিত। তাই আটা-ময়দা বা ভাত অথবা দু’য়ে মিলিয়েই রাতে খেতে পারেন। তবে পরিমাণটা অবশ্যই বুঝে খেতে হবে।
আমরা যে সাদা ভাত খেয়ে থাকি,
জাতভেদে তার জিআই ৬৯ থেকে ৭৭ পর্যন্ত ওঠানামা করে। আর রুটির জিআই ৪৮ থেকে ৫৬। তবে এখানেও কথা আছে। সাদা পাউরুটি বা ময়দার তৈরি রুটি বা পরোটার জিআই প্রায় ভাতের মতোই। এখানে লাল আটার রুটির কথাই বলা হচ্ছে। ওদিকে লাল চালের কম জিআইযুক্ত চালও আছে। ব্রাউন রাইস বা লাল ভাতের জিআই ৬৪ থেকে ৭২ পর্যন্ত।
তার মানে,
৫০ গ্রাম ভাত খেলে যে পরিমাণ গ্লুকোজ আপনার রক্তে মিশবে,
৫০ গ্রাম রুটি খেলে তার চেয়ে অনেক কম গ্লুকোজ পাবেন আপনি। কম গ্লুকোজ মানে কম ক্যালরিও। আরও কথা আছে। আটায় ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ বেশি,
ভাতে ফাইবার অনেক কম। ফাইবার হলো সেই উপাদান,
যা শোষিত হয় না আমাদের অন্ত্রে,
মলের সঙ্গে অশোষিত অবস্থায় বেরিয়ে যায়। মানে ফাইবার খেলে পেট ভরে,
তৃপ্তি হয়,
কিন্তু তা বাড়তি ক্যালরি যোগ করে না। তাই রুটি খেয়ে কম ক্যালরি বা কম গ্লুকোজ গ্রহণ করেও আপনি পেট ভরিয়ে ফেলতে পারবেন। রুটি পরিপাক হতে সময় নেয় বেশি,
পাকস্থলী ও অন্ত্রে থাকেও বেশি সময় ধরে,
তাই রুটি খেলে সহজে আবার খিদে পাবে না। মস্তিষ্কের তৃপ্তি কেন্দ্র
(স্যাটাইটি সেন্টার)
দীর্ঘ সময় সক্রিয় থাকবে। শুধু রুটি নয়,
উচ্চ ফাইবারযুক্ত যেকোনো শস্যজাতীয় খাবারের
(আটা,
ভুট্টা,
যব)
জন্যই এটা প্রযোজ্য। তাই ডায়েট করতে চাইলে,
ওজন কমাতে চাইলে বা কম ক্যালরি খেতে চাইলে গোটা শস্যের ও বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার বেছে নিতে হবে।
পুষ্টিবিদদের মতে,
ভাত ও রুটি একসঙ্গে খেলে অনেক সময় মাপের ঠিক ঠিকানা থাকে না। মানুষ এই দুই খাবারের মধ্যে ব্যালেন্স খুঁজে পান না। ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়ে যায়। এই কারণে ওজন ও সুগার দুইই বাড়ে। তাই এই দুই ধরনের খাবার একদমই একসঙ্গে নয়। বরং দুপুরে ভাত খেলে রাতে খেতে পারেন রুটি। এই কম্বিনেশন মেনে চললে উপকার পাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url